শুক্রবার,২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


কুমিল্লায় ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু বাড়ছে


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
১৩.০৫.২০১৮

 

ডেস্ক রির্পোট:

কুমিল্লা ছোট বড় ক্লিনিক গুলো ভুল চিকিৎসা যেন রোগীদের পিছু ছাড়ছে না। শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হচ্ছে। এই ভুল চিকিৎসায় ভোগান্তিরও শেষ নেই। কখনও কখনও সেটা জীবন সংহারের পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে।

ডাক্তারের অদক্ষতা আর উদাসীনতায় প্রচুর অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি অহরহই প্রাণ দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এর ফলে কোন কোন ক্ষেত্রে হামলা-মামলাসহ অপ্রীতিকর ঘটনারও জন্ম হচ্ছে। কুমিল্লার চান্দিনায় এক ভুয়া গাইনি ডাক্তারের অপচিকিৎসায় একই দিনে দুই নবাজাতকের মৃত্যু ঘটেছে।

গত ৩ মে উপজেলার নবাবপুর বাজারে ‘নবাবপুর মেডিকেল সেন্টার’ নামে একটি ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে। শহরের বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসকের অবহেলায় গত এক বছরে ৩০ জনের বেশি মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে সেবার নামে রোগীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। কুমিল্লাজুড়ে শতশত অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ছড়াছড়িতে স্বাস্থ্যসেবা হুমকিতে পড়েছে ।বৈধ কাগজপত্র ও লাইসেন্স না থাকাসহ নানা অনিয়ম ও অপরাধের দায়ে ইতোমধ্যে ১৭টি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান। জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে জাঁকজমকভাবে কুমিল্লার লাকসামের বিজরা বাজারে চিকিৎসা সেবার ‘ব্যবসা’ শুরু করে এস.এম সাফি হাসপাতাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

শুরু থেকেই কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে উপজেলার সীমান্ত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটিতে বড় পদের চিকিৎসকরা রোগী দেখেন এমন কথা পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে বেশ জোরেসোরে প্রচার করে রোগীদের আকৃষ্ট করতে থাকেন মালিক পক্ষ। কিন্তু ‘নামিদামী’ এই হাসপাতালটি গত ৯ নভেম্বর হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছেন কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মজিবুর রহমান।

বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে বৈধ কোন কাগজপত্র খুঁজে পায়নি প্রতিনিধি দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই অবৈধভাবে সেবার নামে ব্যবসা চালিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র এস.এম সাফি হাসপাতাল নয়, কুমিল্লা জেলায় লাইসেন্সবিহীন এমন অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দুইশ ছাড়িয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রের দাবি এই সংখ্যা প্রায় দ্বিগুন হবে। গত ৭ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১০ দিনের অভিযানে জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে শুধুমাত্র ৩টি উপজেলা ও কুমিল্লা নগরীতেই লাইসেন্সবিহীন ১৭টি অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধ করেছেন জেলা সিভিল সার্জন। বন্ধ হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশিরভাগই শহর এলাকায় অবস্থিত। উপজেলা সদরের তুলনায় পিছিয়ে নেই গ্রাম এলাকার হাটবাজারগুলোতে অবাধে গড়ে উঠা অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো।

সেখানেও চলছে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতিযোগিতা। এছাড়া অনুমোদন পাওয়ার আগে শুধুমাত্র আবেদন করেই সেবার নামে ব্যবসা শুরু করেছেন অন্তত ২০টি প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্স না পাওয়া পর্যন্ত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করে ব্যবসা পরিচালনা করা সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনি। কুমিল্লা জেলায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডেন্টাল ক্লিনিক, ব্লাডব্যাংক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা রয়েছে ২৭৫টি। যার মধ্যে শুধুমাত্র কুমিল্লা নগরীতেই রয়েছে ১০৩টি।

এছাড়া জেলার চান্দিনায় ১২টি, চৌদ্দগ্রামে ১০টি, বরুড়ায় ৮টি, নাঙ্গলকোটে ৪টি, সদর দক্ষিণে ৬টি, লাকসামে ১৭টি, মনোহরগঞ্জে একটি, হোমনায় ১০টি, মেঘনায় একটি, বুড়িচংয়ে ৭টি, ব্রাহ্মণপাড়ায় ৬টি, তিতাসে ১১টি, দেবিদ্বারে ১৩টি, মুরাদনগরে ২৩টি ও দাউদকান্দিতে ৩৯টি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার লাইসেন্স প্রাপ্ত রয়েছে। উপজেলাগুলোর সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে প্রতিনিয়ত ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠেছে এসব অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল। জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর বাজার থেকে হোমনা সড়কে প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই অন্তত ৪০টি ক্লিনিক-হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। যার বেশিরভাগেরই লাইসেন্স নেই। পুরো জেলার এসব অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বেশির ভাগেরই অবস্থা বেহাল। এসব প্রতিষ্ঠানে জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে পরিদর্শনে গেলে প্রায়ই সন্ধান মিলে ভুয়া বিশেষজ্ঞ-সার্জারি চিকিৎসক, প্যাথলজিস্ট, সনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ও নার্সের। আর জটিল রোগের অপারেশনে পিছিয়ে নেই বাহারি পদবীর এসব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নামধারী ভুয়া ডাক্তাররা।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি