বুধবার,২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


বাচামারা প্রাথমিক বিদ্যালয় যমুনায় ঝুলে আছে


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
২৩.০৫.২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট :

যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় যমুনা তীরবর্তী বাচামারা উত্তরখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীনের মুখে। বিদ্যালয়টি যে কোন সময় চলে যেতে পারে নদীগর্ভে। নদীতে চলে গেলে বন্ধ হয়ে যাবে প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় দুইশ’ শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন।

শুধু বাচামারা ইউনিয়নের ৪৪ নং উত্তরখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিই নয়; যমুনার ভাঙনের মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদরাসা ও একটি কবরস্থান। নদী ভাঙনের হাত থেকে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

উত্তরখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রিক্তা আক্তার জানান, তিন বছর ধরে বিদ্যালয়টি ভাঙনের আশঙ্কার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার পত্র মারফত জানালেও তারা ভাঙন রোধ কিংবা ভবন স্থানান্তরের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। এখন বিদ্যালয়টি রক্ষাসহ প্রায় পৌনে দুইশ’ শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

প্রধান শিক্ষক আরো জানান, ১৯৬৯ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবন নির্মাণ হয়েছে। এই বছরেও শতভাগ শিক্ষার্থী পাশ করে বিদ্যালয়টিতে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো: শহিদ মোল্লা জানান, গত বর্ষায়ও বিদ্যালয়টি হুমকির মুখে ছিলো তখন বিদ্যালয়টি স্থানান্তরিত ও ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে রেজুলেশন আকারে দেয়া হয়েছিল। জনপ্রতিনিধিদের কাছেও আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

তিনি ক্ষোভের সাথে জানান, যদি সময়মতো প্রদক্ষেপ নেয়া হতো তাহলে এগুলো শিক্ষার্থী ও ভবনের ক্ষতি আশঙ্কা থাকতো না। তিনি জানালেন যমুনায় ঝুলে আছে বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটি।

বাচামরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেললে স্কুলের ভবনটি রক্ষা সম্ভব। তিনি জানান, এই এলাকাটি ভাঙন ঠেকাতে সাড়ে ৩ কোটি টাকা একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যা হেড অফিসে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে ২০/২৫ একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এবিষয়ে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মামুন হাওলাদার জানান, প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষার আর কোনো সুযোগ নেই। ভাঙনের যে রূপ তাতে কোনো অবস্থায় ভাঙনের কবল থেকে এ যাত্রায় রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব নয়।

তবে তিনি জানালেন, যমুনা নদীর ভাঙ্গনের কবল থেকে বাচামরা এলাকা রক্ষা করতে ৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। যা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এবিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমার সাথে এব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, ভাঙ্গনের হুমকির মুখে বাচামারা উত্তর খন্ড সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বি ভবনের নিলামের ব্যপারে ডিসি সারকে (জেলা প্রশাসক) জানানো হয়েছে। এছাড়া আমি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নিলামের জন্য নীতিমালা ব্যবস্থা করে দিয়েছি তিনি সব করবেন।

এদিকে স্থানীয় মসজিদের সভাপতি ইউছুব আলীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তাদের টিনের নির্মিত মসজিদটি ভাঙন থেকে রক্ষা করতে স্থানীয়দের সহায়তায় সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা থেকে মসজিদ রক্ষা করতে শুক্রবারের জুম্মার নামাজ আদায় করতে পারেননি এলাকাবাসী। মসজিদ রক্ষা করতে সবাই মিলে নামাজ বাদ দিয়ে টিন বেড়া খুলে নিতে হয়েছে। ওই মাদরাসার ইমাম হাফিজ উদ্দিনও একই কথা জানালেন।

তিনি আরো জানান, মসজিদের পাশেই রয়েছে উত্তরখন্ড কবরস্থান ও মাদরাসা। মাদরাসাটিতে ১০০ শিক্ষার্থীকে নূরানী পদ্ধতিতে কোরআন শিক্ষা দেয়া হয়। ভাঙন ঠেকানো না গেলে মাদরাসা ও কবরস্থানটিও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি