শুক্রবার,২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


অ্যান্টি মানি লন্ডারিং সেবায় ই-কেওয়াইসি


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
১৩.০১.২০২০

ডেস্ক রিপোর্টঃ

ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অগ্রগতির জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, বাংলাদেশ ব্যাংক ইলেকট্রনিক গ্রাহক তথ্য সংগ্রহ সংক্রান্ত বিশেষ একটি আদেশ জারি করেছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ইলেকট্রনিক নো ইয়োর কাস্টমার (ই-কেওয়াইসি) দেশের সব ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানে চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের হিসেবে প্রতিবছর অ্যান্টি মানি লন্ডারিংয়ে ৮.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করছে বিশ্বের ব্যাংকগুলো। ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইমের হিসেবে মানি লন্ডারিং অপরাধের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর ক্ষতি হচ্ছে ২.৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কিনা বিশ্বের সব দেশের জিডিপির ৫ শতাংশের সমান।

বৈশ্বিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির তথ্য জানাচ্ছে, বিশ্বজুড়ে ৬০ভাগ ব্যাংক আর্থিক সেবা ব্যবস্থাপনার ঝুঁকিতে আছে। কেপিএমজি ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল ফ্রড লিড ন্যাটালিয়া ফকনারের ভাষ্যে, ‘বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর ব্যাংকিংখাতে ঝুঁকি দেখা দিচ্ছে। ব্যাংকগুলোকে কার্যকর ও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।’

২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে আর্থিক প্রতারণা বেড়েছে ৬১ শতাংশ। ম্যাকেঞ্জির হিসেবে আর্থিক অপরাধের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাংকগুলোর ক্ষতি হচ্ছে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোও সাইবার অপরাধ ও অ্যান্ট মানি লন্ডারিংয়ের মত অনেক বিষয়ে ঝুঁকির মুখে আছে।

ব্যাংকিংক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ঝুঁকি কমাতে ও ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে গ্রাহকদের তথ্য আদান-প্রদান ও বিনিময়ের জন্য ‘ইলেকট্রনিক নো ইয়োর কাস্টমার’ ই-কেওয়াইসি চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সরকার।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ ও সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯-কে প্রাধান্য দিয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ই-কেওয়াইসি চালু করার আদেশ দেয়। ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘গিগা ইকেওয়াইসি’-এর মাধ্যমে ১০টি ব্যাংকে ই-কেওয়াইসি প্রকল্প চালু করে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানে ই-কেওয়াইসি প্রকল্প প্রাথমিক পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষক ডা. রিদওয়ানুল হক জানান, ‘আমাদের দেশের ব্যাংকগুলো অন্যান্য দেশের ব্যাংকের মতই সাইবার ঝুঁকিতে আছে। সেই ঝুঁকিকে মোকাবেলা করতে বিশ্বজুড়ে ই-কেওয়াইসি চালু করেছে ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

আমাদের দেশের রেমিট্যান্স চ্যানেল এখন বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি ব্যাংক। মোবাইল ফোনে ব্যাংকিং সেবার জগত বড় হচ্ছে। সব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্বশীল ভূমিকা ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য ই-কেওয়াইসি চালু করা প্রয়োজন।’ সরকার খুব দ্রুত সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ই-কেওয়াইসি চালু করার বিষয়ে বেশ সচেষ্ট। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব ব্যাংকে কেওয়াইসি অটোমেটেড বা ই-কেওয়াইসি চালুর জন্য বলা হয়েছে।

ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম, গ্রাহকদের তথ্য সংরক্ষণ, জাতীয় ডাটা সেন্টারের সঙ্গে তথ্য সনাক্তকরণ, আঙ্গুলের ছাপ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন তথ্যের সর্বোচ্চ গোপনীয় ও নিরাপত্তা দিচ্ছে গিগা ই-কেওয়াইসি। গিগাটেক লিমিটেড বেক্সিমকো গ্রুপের একটি প্রযুক্তি সেবা ও উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠান।

ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাকে সবার কাছে আরও সক্রিয় ও কার্যকর করে তুলতে ই-কেওয়াসি ব্যবহার শুরুর চেষ্টা করেছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ONE ব্যাংকের মোবাইল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসের প্রধান আ জ ম ফয়েজ উল্লাহ চৌধুরী জানান, ‘আমরা গ্রাহকের আর্থিক তথ্যের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে চাই।

গ্রাহকেরা এখন সহজ উপায়ে ব্যাংকিং সেবা খোঁজেন। ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও বেশি সুবিধাজনক উপায়ে ও পেপারলেস সেবা প্রদান করা যাবে।’ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট দেশের ৩৩ জেলার ৫০টি এলাকায় বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে গ্রাহক সেবা ও তথ্য সংগ্রহের কাজ পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে।

ই-কেওয়াইসির মাধ্যমে ব্যাংকগুলো আরও বেশি পেপারলেস ও সক্রিয় গ্রাহক সেবা প্রদানের সুযোগ পাবে বলে আর্থিক সেবা বিষয়ক প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের ধারণা।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি