শুক্রবার,১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


বিক্রি হচ্ছে না চামড়া


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
০২.১০.২০১৬

url-4

পূর্বাশা ডেস্ক:

পবিত্র কোরবানীর ঈদে কিনা চামড়া এখনো বিক্রি করতে পারেনি ব্যবসায়িরা। এতে চামড়া কিনা আর সংরক্ষণের খরচ মিলিয়ে আরো বেশি টাকা যোগ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চামড়া ব্যবসায়িরা। তাদের দাবী চট্টগ্রাম ও ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়িরা চামড়া কিনতে আগ্রহী না। আগে তারা আমাদের সাথে চামড়ার জন্য যোগাযোগ করতো এখন আমরা যোগাযোগ করেও চামড়া বিক্রি করতে পারছিনা। তাই বিপুল টাকা লোকসান হবে সেটা নিশ্চিত। তাদের দাবী একটি মধ্যস্বত্বভোগী এবং সরকারের একটি পক্ষ বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে।

কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের পাশ্ববর্তী চামড়ার আড়তদার রিয়াজউদ্দিন বলেন, আমি এবারে ১৬/১৭ লাখ টাকার চামড়া সংগ্রহ করেছি। তার মধ্যে ১৬০০ গরুর চামড়া, ১৭০০ খাসী ও ভেড়ার চামড়া। আশা করেছিলাম এসব চামড়া বিক্রি করে কিছু টাকা লাভবান হবো। কিন্তু মনে হচ্ছে প্রচুর টাকা লোকসান হবে। কারন এখনো পর্যন্ত ঢাকা বা চট্টগ্রামের কোন আড়তদার আমাদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখায়নি। আগে তারা আমাদের কাছে খবর নিত চামড়া আছে কিনা বা কি দামে বিক্রি করবো, এখন পবিত্র কোরবানের ঈদের পর থেকে কয়েকবার আমি নিজে ফোন করেও কোন সুখবর পাইনি। তার উপর এতদিন চামড়া সংরক্ষণ করতে গিয়ে খরচ আরো বেড়েছে। আর এবার লবণের দাম অস্বাভাবিক বেশি। আগে প্রতিমন লবণের দাম ছিল ১০০/১৫০ টাকা কিন্তু এবার সেই লবণ কিনতে হয়েছে ৩৫০/৪০০ টাকায়। পরে পরে নাকি আরো দাম বেড়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের দামও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে খরচও পোষাতে পারবো কিনা বুঝতে পারছিনা।

আরেক চামড়া ব্যবসায়ি বাংলাবাজার এলাকার  ফকির মোহাম্মদ বলেন, আমরা মাঠ পর্যায় থেকে একটি চামড়া ৫০০/৬০০ টাকা দরে সংগ্রহ করেছি সংরক্ষণ খরচসহ সেই চামড়া এখন ১০৫০ টাকা পড়েছে। আসা করেছিলাম ঢাকাতে তা ১৫০০/১৭০০ টাকা বিক্রি করে কিছু লাভবান হবো কিন্তু সেই আশা পূরণ হবে না। তার উপর পাওনাদাররা এখন টাকার জন্য আসছে তাদেরও টাকা দিতে পারছি না। এতে আমাদের অবস্থা খুবই করুন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, মূলত ঢাকাতে ট্যানারী মালিকরা স্থির না হওয়ায় চামড়া নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। তারা চামড়া না কিনলে আমাদের দেশত্যাগ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আর এ পর্যন্ত ঢাকার ব্যবসায়িরা চামড়া কিনতে কোন প্রকার আগ্রহ দেখায় নি। আগে চামড়ার জন্য আমাদের কাছে তারা ধর্ণা দিত এখন আমরা বার বার ফোন করেও কোন ফল পাচ্ছি না। তার মতে বাংলাদেশ চামড়া ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা উঠে পড়ে লেগেছে এটা তারই প্রভাব। আমরা মানুষ কম শিক্ষিত হলেও যতটুকু শুনেছি বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদা ঠিকই আছে এবং প্রতিইঞ্চি চামড়ার দাম তারা আগের ছেয়ে বাড়িয়েছে তাহলে আমাদের দেশে কেন চামড়ার দাম বছর বছর কমে ? অথচ বিশ্বের  মধ্যে আমরাই চামড়া উৎপাদনকারী শীর্ষদেশ। আর আমরাই চামড়া নিয়ে পথে পথে ঘুরছি।

আরেক চামড়া ব্যবসায়ি ওসমান গনি বলেন, আমরা ঈদের দিন ৫ লাখ টাকার মত খুচরা চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম একেবারে প্রান্তিক বাড়ি থেকে আমরা ৫০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনেছি সন্ধ্যায়। সেই চামড়া কিনতে চাইছে ৪৫০ টাকা দিয়ে অর্থাৎ নগদের ৭০ হাজার টাকার লোকসান। পরে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোন মতে ১৫ হাজার টাকার লোকসানে চামড়া বিক্রি করেছি। পরে আমরা কয়েক জন মিলে ঢাকায় বিক্রি করার জন্য ৭ লাখ টাকার মত চামড়া সংগ্রহ করেছি আশাছিল সেখানে কিছু চামড়া বিক্রি করে লাভবান হবো এখন দেখছি একটি চামড়াও বিক্রি করতে পারিনি। মনে হচ্ছে সেখানেও বিপুল টাকা লোকসান হবে। তার মতে একটি মধ্যস্বতভোগী ও প্রশাসনের একটি অংশ চামড়া শিল্পকে ধ্বংশের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। চামড়াকে কিছুদিন আগেও স্বর্ণ মনে করা হতো অথচ এখন সেই চামড়াকে ফিরেও তাকাচ্ছে না মানুষ। আর আমাদের ট্যানারিগুলোকেও নানানভাবে এখন জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। আমার জানা মতে অনেক ট্যানারী মালিক এখন ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ট্যানারী বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাই চামড়া নিয়ে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না। আর দিন দিন এ কাজে লোকজন কমে আসছে আমার মতে এ অবস্থা চলতে থাকলে একদিন পাট যেমন সোনালী আঁশ হিসাবে বইয়ের পাতায় ছাড়া কোথাও স্থান নেই চামড়া ও এক সময় বইয়ের পাতায় ছাড়া দেখা যাবে না। আর আমি বুঝতে পারি না ভারতে চামড়ার দাম বাড়তে থাকলে শ্রীলংকা নেপাল এমন কি ভুটানের চামড়া দাম দিন দিন বাড়লে আমাদের কেন এ অবস্থা ? আসলে বিষয়টি কি সেটা খুজে বের করা দরকার।

এদিকে রামু উখিয়া, চকরিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যোগাযোগ করে দেখা গেছে ঈদের সময় সংগ্রহ করা চামড়া এ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেনি ব্যবসায়িরা।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি