রবিবার,১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


সাইবার নিরাপত্তার উচ্চ ঝুঁকিতে ৫২% ব্যাংক


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
০৫.০৫.২০১৭

পূর্বাশা ডেস্ক:

ব্যাংকগুলোর ৫২ শতাংশই তথ্য-প্রযুক্তি নিরাপত্তার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ১৬ শতাংশ ‘খুবই উচ্চ’ ঝুঁকিতে এবং ৩৬ শতাংশ ‘উচ্চ’ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাকি ৪৮ শতাংশ ব্যাংকের মধ্যে ৩২ শতাংশ ব্যাংক ‘মধ্যম’ ঝুঁকিতে, ১২ শতাংশ ব্যাংক ‘নিম্ন’ ঝুঁকিতে এবং ৪ শতাংশ ব্যাংকের তেমন কোনো ঝুঁকি নেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) মিলনায়তনে ‘আইটি অপারেশনস অব ব্যাংক’ শীর্ষক কর্মশালায় উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. শিহাব উদ্দিন খান।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গবেষণার জন্য জরিপ করতে গিয়ে সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশি ৩০টি ব্যাংকের কাছে জানতে চাওয়া হলে ১৬ শতাংশ ব্যাংক বলেছে, তাদের বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়। তারা খুবই উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ৩৬ শতাংশ ব্যাংক মনে করে, যেকোনো মুহূর্তে তাদের তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া ৩২ শতাংশ ব্যাংক কিছুটা কম ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে। ১২ শতাংশ ব্যাংক কম ঝুঁকিতে এবং ৪ শতাংশ ব্যাংক মনে করছে কোনো ঝুঁকি নেই।

আরো বলা হয়, ডাটা সেন্টার ও ডিজাস্টার রিকভারি সেল সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য মাত্র ৩৫ শতাংশ ব্যাংকের সনদপ্রাপ্ত ডাটা সেন্টার ডিজাইন কর্মকর্তা রয়েছে। এক বছর আগে এই হার ছিল ১৮ শতাংশ। তবে ৫৮ শতাংশ ডাটা সেন্টার এবং ১৮ শতাংশ ডিজাস্টার রিকভারি সেল বহুতল ভবনে অবস্থিত, যা ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। অধিকন্তু ২ শতাংশ শীতল ডিজাস্টার রিকভারি সেল উষ্ণতে রূপান্তরিত হয়েছে। যেকোনো সময় ডাটা সেন্টার বন্ধ করে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট পরীক্ষা করতে অর্ধেক ব্যাংকই ভয় পাচ্ছে। এ ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকের ৯ শতাংশ সার্ভার মাইক্রোসফট ইউন্ডোজ ও লিনাক্সসহ বিভিন্ন অপারেটিং সিস্টেমের ফি ভার্সন ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকড হওয়ার পর ৬০ শতাংশ ব্যাংক তাদের সাইবার নিরাপত্তার বাজেট বাড়িয়েছে। ৮৪ শতাংশ ব্যাংক তাদের কর্মীদের আইটি সচেতনতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জোরদার করেছে। ৩০ শতাংশ ব্যাংক সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে দক্ষ কর্মী নিয়োগ করেছে। ৭৩ শতাংশ ব্যাংক তাদের বিদ্যমান সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক নীতিমালা যুগোপযোগী করেছে বলেও ওই প্রবন্ধে তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ দেশের ব্যাংকগুলোর আইটি খাতে বিনিয়োগ ধীরে ধীরে বাড়ছে। ২০১৬ সালে পুরো ব্যাংক খাতে এক হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এই ব্যয়ের বেশির ভাগই হয়েছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার কেনা, নেটওয়ার্কিং, প্রশিক্ষণ ও অডিট খাতে। ২০১২ সালে আইটিতে পুরো ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ ছিল এক হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। গত বছর ছিল এক হাজার ৭০৩ কোটি টাকা।

এতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে ব্যাংকগুলোর মোট ৭৬.৯০ শতাংশ শাখা অনলাইনের আওতায় এসেছে। আগের বছর অনলাইনের আওতায় ছিল ৭৫.১০ শতাংশ শাখা। বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর শতভাগ শাখা অনলাইনে পরিচালিত হলেও সরকারি ব্যাংকগুলোর কারণে পরিস্থিতি এ রকম রয়েছে। ব্যাংকগুলোর আইটি বিভাগে প্রয়োজনীয় লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে এতে উঠে এসেছে।

কর্মশালার উদ্বোধনকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, ব্যাংকগুলো বিদেশি সফট্ওয়্যার ব্যবহারে ঝুঁকছে। এর পেছনে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ হলেও ব্যাংকগুলো এখনো ঝুঁকিমুক্ত হয়নি। বাংলাদেশের সব ব্যাংকে একই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করলে সাইবার ঝুঁকি ও আর্থিক ক্ষতি দুটিই কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি আইটি সিকিউরিটি গাইডলাইন তৈরি করেছে। দেশের ব্যাংকগুলোকে আইটি নিরাপত্তা বাড়াতে এবং সচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধূরী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আইটি এবং সাইবার সিকিউরিটিসহ সাতটি বিষয়ের ওপর বিআইবিএম পর্যালোচনা এবং গবেষণা করে আসছে। ব্যাংক খাতের সেবার মান বাড়াতে বিআইবিএমের সুপারিশগুলো কাজে আসতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলী বলেন, ব্যাংকিং খাতে কয়েক ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এসব জালিয়াতির জন্য কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকাররাই দায়ী। আবার কিছু ঘটনা গ্রাহকদের অসচেতনতার কারণে ঘটছে। সুতরাং উভয় পক্ষকেই দক্ষ হতে হবে।

বিআইবিএমের পরিচালক ড. শাহ মোহাম্মদ আহসান হাবীব, সাউথইস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মঈন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিদেশি সফটওয়্যারের সমালোচনা করা হলেও হঠাৎ করে দেশি সফটওয়্যার ব্যাপকভাবে বাড়ানো ঠিক হবে না। দেশি এবং বিদেশি সফটওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় করেই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের ডিএমডি মোহাম্মদ আলী বলেন, “ব্যাংকে সাইবার সিকিউরিটি জোরদার করতে ‘ইথিক্যাল হ্যাকার’ ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইন পুরোপুরি অনুসরণ করলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে না। ”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবদুলাল রায় বলেন, দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহার না করে ব্যাংকগুলো অহেতুক বিদেশি সফটওয়্যারের দিকে ঝুঁকছে। অহেতুক বিদেশ ভ্রমণ কিংবা অন্যকোনো লাভের আশায় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা এ কাজ করছেন।

পূর্বাশানিউজ/০৫-মে,২০১৭/ফারজানা



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি