ইমতিয়াজ আহমেদ জিতুঃ
ভাইরে বাবাকে বাচাঁতে পারিনি, আর মাকে খুজেঁ পাচ্ছি না। তুই যে আমাকে তাদের দেখভালের জন্য সাথে পাঠাইলি, আমি তো আমার দায়িত্ব পালন করতে পারলাম না।
২৪ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৩ টায় এবি এম আবুল কালাম সৌদি থেকে দেশে তার ভাই কামাল হোসেনকে মুঠোফোনে বাবার মৃত্যু আর মায়ের নিখোঁজ সংবাদ জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার ৪ নং শ্রীপুর ইউনিয়নের গজারিয়া চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা আবদুল লতিফ (৭৫) তার স্ত্রী মরিয়মের নেছা ও ছেলে এবিএম আবুল কালামকে নিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর হজ্বে যান ।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর মিনায় পদদলিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এসময় আহত হন স্ত্রী মরিয়মের নেছা ও ছেলে এবি এম আবুল কালাম। ছেলে কিছুটা সুস্থ হয়ে পরে নিখোঁজ মাকে খুঁেজ পায় আহতাবস্থায়। পরে হাসপাতালে নেয়ার পর এখন মা ও ছেলে সুস্থ্য হয়ে হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সৌদি আরবের মিনায় ‘শয়তান স্তম্ভে’ পাথর ছোড়ার সময় পদদলিত হয়ে দেশটির সরকারি হিসাব মতে ৭১৯ হাজি নিহত হন। আব্দুল লতিফ তাদের মধ্যে একজন।
নিহত আব্দুল লতিফের বাসায় এখন শোকের মাতম। পিতাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ তার সন্তানরা। বাবা-মা ও ভাইয়ের অভিভাবকত্ব শূণ্য পরিবারের সাথে ঈদ করতে দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন তার অপর ছেলে কামাল হোসেন।
বাবাকে হারিয়ে নির্বাক প্রবাস ফেরত সন্তান কামাল হোসেন ও মেয়ে হাজেরা বেগম। কামাল হোসেন জানান, আমি দুবাই থেকে আমার ভাই এবি এম আবুল কালামকে ফোনে বলেছি, ভাই মা-বাবাকে একা হজ্বে পাঠানো ঠিক হবে না। ভাই তুমিও যাও। তুমি তাদের খেয়াল রাখবে। তারা তিনজন গেল। কিন্তু বাবা তো আর ফিরে আসবে না। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় বাবা ও মা ভাইয়ের সাথে ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে দুঘর্টনার পর বাবা- মা ভাইয়ের হাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভাইও পদদলিত হয়। হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে ভাই জানতে পারে বাবা পদদলিত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন । আর মা নিখোঁজ রয়েছেন। তখন ভাই আমারে ফোন করে এ সংবাদ দেয়। পরে মাকে খোজাঁখুজি করে আহতাবস্থায় হাসপাতালে পাওয়া গেছে।
নিহত হাজী আবদুল লতিফের ছোট ভাই মো: শহীদুজ্জামান জানান, ভাই হজ্বে যাওয়ার আগে আমরা সবাই এক সাথে খাওয়া-দাওয়া করেছি। হজ্বে যাওয়ার পর আর ভাইয়ের সাথে কথা হয়নি। ভাতিঝার সাথে মুঠোফোনে কয়েকবার কথা হয়েছে। খাওয়ার টেবিলে এক সাথে খাইলাম, সেখানেই শেষ কথা হয়েছিল। আর তো খাওয়া টেবিলে ভাইকে পাবো না।
নিহতের পরিবার আশা করছেন হজ্বের মতো পূণ্যের কাজে তাদের মৃত্যুবরণ হয়েছে তাই তাদের জানাজা ও দাফন জান্নাতুল মাওয়াতেই দেবে সৌদি সরকার।
নিহতের ছোট ভাই মো: শহীদুজ্জামান জানান, ভাতিঝার সাথে ফোনে (২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে) কথা হয়েছে। সে সৌদি সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছে ভাইয়ের দাফন যাতে জান্নাতুল মাওয়াতে করা হয়। আমরা সেই আশাতে রয়েছি।
নিহতের ভাইয়ের স্ত্রী সালমা শিরিন জানান, সৌদি সরকারের হজ্ব ব্যবস্থাপনায় আরো শৃংখলার প্রয়োজন। তারা যদি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য কাজ করতো, তাহলে এত মানুষ মারা যেত না।
হজ্বের কাজ শেষে পিতাকে দাফন করে মাকে নিয়ে কবে ফিরবেন আবুল কালাম তা এখনও জানেন না তাদের পরিবারের অন্যরা।
নিহত আবদুল লতিফের ২ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে রয়েছে।
ই-মেইলে স্বজনদের ছবি আছে