শুক্রবার,৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


ফেসবুক বন্ধ সরকারের দুর্বল সমাধান


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
২১.১১.২০১৫

 

facebook_off1-400x213

হোসেন: বাংলাদেশ সরকার ফেসবুক এবং কয়েকটি মোবাইল যোগাযোগ অ্যাপ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। তবে অনেকে সেই নিষেধাজ্ঞার দেয়াল টপকে ফেসবুক এবং অন্যান্য সেবা ব্যবহার করছেন। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, লাইন এবং ট্যাঙ্গো বন্ধ করা হয় গত বুধবার, যুদ্ধাপরাধের দায়ে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় সর্বোচ্চ আদালত বহাল রাখার ঘোষণার পর। ইতিপূর্বে এ ধরনের রায় ঘোষণার পর সহিংসতায় অনেক মানুষ মারা গেছে। ফলে এবার আগে থেকেই নিরাপত্তা নিয়ে বাড়তি সতর্কতা দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সপ্তাহে বিভিন্ন অনলাইন সেবাদাতার উপর নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দেন। নিরাপত্তা রক্ষায় এমনটা করা হবে জানান তিনি। বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি সচিব সারোয়ার আলম নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘‘সরকার ছয়টি অনলাইন সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্মের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।’’

বুধবার নিষেধাজ্ঞা জারির শুরুতে দেড়ঘণ্টা ইন্টারনেট থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বাংলাদেশ, যদিও সরকারের নির্দেশনা ছিল শুধুমাত্র ছয়টি প্ল্যাটফর্ম বন্ধের। বিটিআরসি ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়াকে ‘ভুল বোঝাবুঝির’ ফসল হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। তবে ইন্টারনেট ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ কয়েকজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ফেসবুকে প্রবেশ করে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের ঘোষণা দেন। তারা বিপকল্প উপায়ে ইন্টারনেট ব্যবহারের বিভিন্ন উপায়ের কথাও জানান।

বাংলাদেশের অন্যতম ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আরিফ আর রহমান জানিয়েছেন, তিনি প্রক্সি ব্যবহার করে ফেসবুকে প্রবেশ করেছেন যেখানে তার অনলাইন অবস্থান দেখানো হচ্ছে পাপুয়া নিউগিনিতে, যদিও তিনি অবস্থান করছেন বাংলাদেশে। অনলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবের জানিয়েছেন, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে কোনকিছু পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা অসম্ভব। কেননা নিষিদ্ধ বিষয়াদি ব্যবহারের বিভিন্ন বিকল্প আছে।

তিনি বলেন, ‘‘এটা খুবই স্বাভাবিক যে কিছু ‘টেক-সেভি’ মানুষ নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ফেসবুক ব্যবহার করছেন কিংবা ভাইবার, ট্যাঙ্গো ব্যবহার করে কথা বলছেন। তবে এটা অস্বীকারের উপায় নেই নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক মানুষ এ সব সেবা ব্যবহার করতে পারছেন না, বিশেষ করে যাদের নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর উপায় জানা নেই।’’

তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর হচ্ছে, খোদ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীই ফেসবুক নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। জুনায়েদ আহমেদ পলক বৃহস্পতিবার তাঁর ফেসবুকে ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতির ছবি প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক ফেসবুক পাতাটিও নিয়মিত বিরতিতে হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আপডেট করা হচ্ছে।

বর্তমান যুগে নিষেধাজ্ঞা কতটা কার্যকর?
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ব্লগার, প্রকাশক এবং বিদেশি নাগরিকদের উপর বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। চলতি বছর চারজন নাস্তিক ব্লগার এবং একজন সেক্যুলার প্রকাশক খুন হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, মৌলবাদীরা তাদের হত্যা করেছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠী তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট’ সম্প্রতি নিহত দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার দায় স্বীকার করেছে। ফলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বেগ রয়েছে সেদেশে। তবে অনলাইন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ফেসবুক এবং কিছু অ্যাপ বন্ধ করে নিরাপত্তা পরিস্থিতি তেমন একটা বদলানো যাবে না।

সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ আলমাস জামান মনে করেন, নিরাপত্তার বিবেচনায় এসব নিষেধাজ্ঞা খুবই দুর্বল সমাধান। তিনি বলেন, ‘‘যে কেউ প্রক্সি কিংবা ভিপিএন ব্যবহার করে এসব নেটওয়ার্কে, এমনকি মোবাইল থেকেও প্রবেশ করতে পারে।’’

‘কার্যকর নজরদারি’ প্রয়োজন
ফেসবুক ব্যবহার করেই ঢাকা থেকে ডয়চে ভেলের প্রশ্নের উত্তর দেন জামান। তিনি স্বীকার করেন, অনলাইন নজরদারির কার্যকর ব্যবস্থা বাংলাদেশ এখনও গড়ে তুলতে পারেনি। আর বিভিন্ন নিয়ন্ত্রকসংস্থায় একাজে দক্ষ কর্মীরও অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিদের অনলাইন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে ইন্টারনেট গেটওয়েতে একটি ফায়ারওয়াল বসানো যেতে পারে। এভাবে নিয়ন্ত্রণ বেশ সহজ এবং আধুনিক হবে।’’

তবে সুমন আহমেদ সাবির মনে করেন, জঙ্গিবাদ দমন করতে চাইলে অন লাইনের চেয়ে অফলাইনে সরকারকে আরো সতর্ক হতে হবে৷ তিনি বলেন, ‘‘জঙ্গিবাদের প্রতি মানুষ আগ্রহ হচ্ছে কেন তাঁর শিকড় সন্ধান করতে হবে।’’

উল্লেখ্য, এর আগে ২০১০ সালের জুন মাসে এক সপ্তাহের জন্য ফেসবুক এবং ইউটিউব বন্ধ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। চলতি বছরের শুরুতে কয়েকদিনের জন্য ভাইবার এবং হোয়াটসঅ্যাপসহ কয়েকটি মোবাইল অ্যাপ বন্ধ করা হয়েছিল, নিরাপত্তার অজুহাতে।-ডিডাব্লিউ।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি