শুক্রবার,১০ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


এরদোয়ানকে নিয়ে কেন অস্বিস্ততে মোদি


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
০২.০৫.২০১৭

পূর্বাশা ডেস্ক:
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান খোলাখুলি বলেছেন, কাশ্মীর সংকট নিরসনে তার দেশও আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত। পাকিস্তান তাতে রাজি। কিন্তু ভারত সফর শুরু করার আগে দেশটির এক মিডিয়া সাক্ষাতকারে এরদোয়ান কাশ্মীর প্রসঙ্গে যা বলেছেন তা যেন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি ভারত। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন সংকটকে ভারত দ্বিপাক্ষিক ইস্যু হিসেবে দেখে আসতে অভ্যস্ত। এধরনের দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর বাইরে বহুপাক্ষিক আলোচনার কোনো সুযোগ নেই বলে দক্ষিণ এশিয় আঞ্চলিক সহযোগিতা পরিষদ সার্ক মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। যদিও আফগানিস্তান, ইরান, চীন সহ আসিয়ানভুক্ত অনেক দেশই সার্ক নিয়্ েআগ্রহী হয়্ েউঠেছিল। সার্ক কখনো দ্বিপাক্ষিক ইস্যুর খড়গের নিচ থেকে বের হয়ে এসে দক্ষিণ এশিয়ায় মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলা, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা বা কাশ্মীর সংকট নিরসনে আলোচনায় শুরু করতে পারেনি। এসব উদাহরণ থাকার পরও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে বহুপাক্ষিক যে আলোচনার প্রস্তাব তুলেছে তাতে স্বভাবতই ভারতের রাজি না হওয়ার কথা। ইইউ ও ন্যাটো সদস্য হয়ে তুরস্ক কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে বহুপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তা কোনোই গুরুত্ব পায়নি ভারতের কাছে।

এরদোয়ান ভারত সফর করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার সোমবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। দিল্লিতে এসে পৌঁছানোর আগে এরদোয়ান কাশ্মীর ইস্যুতে বহুপাক্ষিক আলোচনায় পাকিস্তান রাজি বলে এমন ইঙ্গিত দেওয়ায় তাতে আরো চটেছে ভারত। অবশ্য সোমবার বিকেলে মোদি ও এরদোয়ান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভাষণ দেওয়ার সময় কেউ কাশ্মীর শব্দটি উচ্চারণও করেননি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্টের এই ভারত সফর কোনো কূটনৈতিক অর্জন আনতে পারছে না সেটা এখন স্পষ্ট। দুই ‘সপ্তাহ আগে এক বিতর্কিত গণভোটের মধ্যে দিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তার ক্ষমতাকে আরো পাকাপোক্ত করে প্রথমেই পা রাখলেন দেশের বাইরে ভারতে। তার আগে এক ভারতীয় চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ‘কাশ্মীরে এই রক্তপাত আমরা চলতে দিতে পারি না। চিরতরে এই সঙ্কটের সমাধানের জন্য আমরা বহুপাক্ষিক একটা সংলাপের সূচনা করতে পারি, তাতে তুরস্কও জড়িত হতে পারে। আর এতে ভারত, পাকিস্তান উভয়েরই লাভ হবে। আমার প্রিয় বন্ধু, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে আমার অনেকদিন ধরেই কথাবার্তা হচ্ছে। আমি খুব ভাল করে জানি তার সদিচ্ছা আছে। তিনি ব্যক্তিগতভাবেও চান এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হোক।’

অন্যদিকে তুরস্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশ বলে পরিচিত। সেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান প্রকাশ্যে এমন প্রস্তাব দিয়ে বসবেন ভারত তা একেবারেই আশা করেননি। এরদোয়ানের ভারত সফরের সময় এ নিয়ে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন।

দিল্লিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অশ্বিনী রায় বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, কূটনৈতিক দিক থেকে এই সফরে ভারতের যে বিশেষ কিছু পাওয়ার নেই, তা পরিষ্কার। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক খাতে হয়তো সহযোগিতা বাড়বে, কিন্তু এই সফরে রাজনৈতিক সংলাপের নিরিখে কোনও অগ্রগতির সম্ভাবনা আমি দেখছি না। তুরস্কে যে ধরনের সরকারই থাকুক, ভারতে বর্তমান সরকারে যে ধরনের হিন্দু জাতীয়তাবাদী ঝোঁক দেখা যাচ্ছে, তাতে এই মুহূর্তে ডিপ্লোম্যাটিক মাইলেজ পাওয়ার আশা নেই বললেই চলে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর কাশ্মীর নিয়ে কোন কথা না বললেও কাশ্মীর ইস্যুর নিষ্পত্তিতে সন্ত্রাসবাদের ব্যবহার ভারত কিছুতেই মানবে না। ভারতের চোখে কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীরা বরাবরই সন্ত্রাসী। মোদি বলেন, সন্ত্রাসবাদের বিপদ ভারত ও তুরস্ক উভয়কেই দুশ্চিন্তায় রেখেছে। এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে এবং আমরা একমত হয়েছি যে কোনও কারণ বা কোনও লক্ষ্য, কোনও যুক্তি দিয়েই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা যায় না।

তুরস্কের সঙ্গে ভারত জঙ্গি নেটওয়ার্ক নির্মূল করতে, তাদের অর্থায়ন বন্ধ করতে, সীমান্ত পারাপার বন্ধ করতেও একযোগে কাজ করবে তাও বলছেন মোদি। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানকে যে ভারত বিশ্বাস করে, সে বার্তা এরদোয়ানকে দিয়েছে দেশটি।

অধ্যাপক অশ্বিনী রায় এও বলেছেন, তুরস্ককে পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব থেকে দূরে সরিয়ে আনা সম্ভব নয়। কাশ্মীরে ভারত নিজেরাই দিন কে দিন অবস্থান হারাতে বসেছে। সংলাপ শুরু করাটা ভারতের মধ্যেই বেশ স্পর্শকাতর বিষয়, এবং ভারত বরাবরই বলে আসছে কাশ্মীর একটা দ্বিপাক্ষিক বিষয়, এখানে বাইরের লোকজন ঢুকবে না। তার কারণ হল আমাদের কারও সঙ্গেই তেমন বন্ধুত্ব নেই এখন – কাজেই বাইরের লোকজন ঢুকলে তো বিপদ। আমেরিকা ইদানিং অবশ্য ভারতের বন্ধু হয়েছে, কিন্তু কাশ্মীর প্রশ্নে তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের দোস্তি আরও অনেক পুরনো। চীনও পাকিস্তানের সঙ্গে আছে, তুরস্ক তো ছিলই। রাশিয়া নিয়েও বলা শক্ত, তারা এখনও ভারতের কতটা বন্ধু।

এসব কারণেই ভারত কিছুতেই কাশ্মীর নিয়ে আলোচনাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে চায় না। ভারতের জনমতও প্রবল, এটা ভারত-পাকিস্তানের ব্যাপার, কাশ্মীরে তৃতীয় কারও নাক গলানোর সুযোগ নেই। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সফরের পর ভারতে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়তে পারে বড়জোর। এরচেয়ে বেশিকিছু আশা করা ভুল অন্তত কাশ্মীর নিয়ে ভারতের মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হবে না।
এদিকে পাকিস্তানের মিডিয়া এক্সপ্রেস ট্রিবিউন ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র গোপাল বাগলের বরাত দিয়ে বলেছে, তিনি বলেছেন, কাশ্মীর তার দেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থান অত্যন্ত পরিস্কার যা সকলেই জানে। গোপাল বাগলে আরো জানান, তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে ভারতের এ মনোভাব জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এও বলা হয়েছে সন্ত্রাস কোনো গ্রহণযোগ্যতা পেতে পারে না। কাশ্মীর মূলত একটি সন্ত্রাসবাদের ইস্যু।

বরং এরদোয়ান ভারতের কাছে দেশটিতে ফেতুল্লাহ গুলেনের কোনো সংগঠন কার্যকর থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন। ভারত যেমন কাশ্মীরকে সন্ত্রাসবাদ ইস্যু মানে তেমনি ফেতুল্লাহ গুলেনও এখন এরদোয়ানের কাছে রাতের ঘুম হারাম করার মত একটি ব্যাপার। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যকে খুব কম বলেই মনে করছেন এরদোয়ান। যা তিনি ১০ বিলিয়নে নিয়ে যেতে চান।

পূর্বাশানিউজ/০২-,মে ২০১৭/মাহি



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি