শনিবার,১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


ছিটমহল বিনিময় চুক্তির লাভ-লোকসান


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
০৯.১২.২০১৪

Thakurgaon

পূর্বাশা ডেস্কঃ

বাংলাদেশ-ভারতের ছিটমহল বিনিময়ের দ্বার খোলার প্রান্ত যতই ঘনিয়ে আসছে, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে লাভ-লোকসানের হিসাব। এতে বাংলাদেশ লাভবান হবে, না কি ভারত লাভবান হবে? তা নিয়েই অংক চলছে ৬০ বছর ধরে। সম্প্রতি এসংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সিদ্ধান্ত ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সম্মতির পর আবারও আসামসহ ভারতের আরও বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে বিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়েছে।

বাংলাদেশের একজন কূটনৈতিক বিশ্লেষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ভূমির পরিমাণ বিবেচনা করলে ভারতই লাভবান হবে। কিন্তু ভারতের বিরোধিতার কারণ অন্য। স্থলসীমা নির্ধারণ হলে স্থলবন্দরগুলো এখন তারা যেভাবে ব্যবহার করছে সেভাবে পারবে না। আরো একটি কারণ হলো ভারতের ছিটমহলগুলোতে লোকসংখ্যা বেশি এবং তাদের অনেকেই আর বাংলাদেশের নাগরিক নেই। ফলে ভারতকে বাড়তি লোকসংখ্যার চাপ নিতে হবে কিছুটা।

আরেকজন কুটনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, ছিটমহলগুলোকে সীমান্তবর্তী এলাকার ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই ভারতের সব নাগরিক নয়, একশ্রেণির মানুষেরা এর বিরোধিতা করছে, তাদের স্বার্থ- সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ক্ষতির কথা চিন্তা করে। বাংলাদেশর পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে ভারত সরকারকে ছিটমহল বিনিময় বিষয়টি নিস্পত্তি করার দাবি, অনুরোধ জানানো হয়ে আসছিল। গত ৬ দশকে ভারতের সরকারগুলো বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রতিশ্র“তি দিলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের বড় লাভ হলো নিজেদের সীমানা নির্ধারণ করতে পারা। স্বাধীনতা ৪৩ বছর পরও আমরা পূর্ণাঙ্গ সীমানা নির্ধারণ করতে পারিনি। এখন সেটি হতে চলেছে।

বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির ভারতীয় অংশের সহ-সাধারণ সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, অবশই দুটি দেশ লাভবান হবে। এভাবে যুগের পর যুগ দুই দেশের মধ্যে স্থল সীমা অনিষ্পণœ অবস্থায় থাকলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কেরও অবনতি হবে।

ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি মইনুল হক বলেন, ভারত শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে। লাভ বাংলাদেশের তো হবেই, ভারতেও হবে। জনগণ দীর্ঘদিনের এই সংকটের সমাধান চায়। আমরা একটি পরিপূর্ণ ভূখণ্ড পাবো।

১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় রেডক্লিফের মানচিত্র বিভাজন থেকেই ছিটমহলের উদ্ভব। এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ১৬২টি ছিটমহল রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের ১১১টি ছিটমহল আছে বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারতে। এসব ছিটমহলে বসবাসকারী জনসংখ্যা সংখ্যা ৫১ হাজার। ২০১১ সালের গণনা অনুযায়ী ভারতের ছিটমহলের লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার এবং বাংলাদেশের ১৪ হাজার। ২৪ হাজার ২৬৮ একর ভূমি নিয়ে দুই দেশের ছিটমহল। তার মধ্যে ভারতের ১৭ হাজার ১৫৮ একর। বাংলাদেশের ছিটমহলের জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর। ভারতীয় ছিটমহলগুলোর অধিকাংশই রয়েছে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে। এসবের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯, পঞ্চগড়ে ৩৬, কুড়িগ্রামে ১২ ও নীলফামারিতে ৪টি ভারতীয় ছিটমহল রয়েছে। অপরদিকে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। এর মধ্যে ৪৭টি কুচবিহার ও ৪টি জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি