রবিবার,১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


কক্সবাজার খাদ্য অফিসে দুর্নীতি চরমে


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
২৯.১০.২০১৬

coxs

পূর্বাশা ডেস্কঃ

কক্সবাজার খাদ্য অফিসে দুর্নীতি চরমে উঠেছে। জনগনের সেবা নিশ্চিত করার জন্য সরকারী কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণসহ আরো অনেক সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। এর ফলে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন তারা।

সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে ডিলার নিয়োগ, কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী ডিও ছাড় দেওয়া, এমনকি মিল মালিকদের কাছ থেকে সব ধরনের বিলের ভাওচার প্রতি টাকা আদায় করায় ক্যাশিয়ারের ভুমিকা পালন করছে সদরের খাদ্য পরিদর্শক।

আবার কর্মচারীদের মধ্যে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোর পূর্বক টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগিরা। তবে বরাবরের মত দৃশ্যমান এসব অনিয়ম দূর্নীতি সম্পর্কে কিছুই বলতে নারাজ সংশ্লিষ্ট কর্তকর্তারা।

কক্সবাজার ঝিলংজা চান্দু পাড়ার এলাকার প্রান্তিক কৃষক আবু নাছের বলেন, আমি গত কয়েক দিন ধরে খাদ্য অফিসে আসা যাওয়া করছি আমাদের কিছু বিল ছিল। তাছাড়া একটা মিলের ও বেশ কিছু বিল ছিল সেটা আমি সমন্নয় করেছি। তিনি বলেন, এখানকার কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে দরকষাকষি, সরকারি টাকা লুটপাটসহ বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িত। তবে তারা নিজেরা সামনে না এসে কর্মচারীদের দিয়ে কথা বলায়। আমি সদর খাদ্য পরিদর্শক শায়লা ফেরদৌসকে টাকা দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করছি আমার চেকের জন্য।

সাংবাদিক পরিচয় আড়াল করে সরজমিনে খাদ্য অফিসে গেলে কথা প্রসঙ্গে খুরশকুল পাল পাড়া এলাকার জিসু বিশ্বাস বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে চেষ্টা করেও একটি ডিলার পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় আমি ডিলার পাইনি। অথচ বর্তমানে যে ডিলারের দায়িত্ব পালন করছে তার বিরুদ্বে অনেক অনেক অভিযোগ আছে। বর্তমানে আমি অন্য একটি কাজে এসেছি।

তিনি বলেন, আমি নিজে সাক্ষি, এখানে কি পরিমাণ অনিয়ম দুর্নীতি হয়। টাকা ছাড়া কোন কাজই হয় না। খোঁজ নিলে জানা যাবে এবার জেলায় ৮৭ হাজার ৭ শত ২২ পরিবারকে খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সুরক্ষা কর্মসূচীর আওতায় ১০ টাকা কেজিতে ৩০ কেজি মাসে চাল দেওয়া হবে। এ কাজের জন্য ৬ উপজেলায় ১২৮ জন ডিলার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমি প্রয়োজনে আদালতে গিয়ে বলতে পারবো সদরের প্রত্যেক ডিলারের কাছ থেকে সদর খাদ্য অফিসে ১৫/২০ হাজার টাকা নিয়েছে। এবং কিছু ক্যাশিয়ার ম্যাডাম ম্যান্টেইন করেছে।

পিএমখালী নুর মোহাম্মদ চৌধুরী পাড়া এলাকার ব্যবসায়ী কাউসার আলম বলেন, আমি যতটুক জানি যারা ডিলার হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের নিয়মিত চাল, আটা দেওয়ার কথা থাকলেও যারা সরকারি কর্মকর্তাদের বেশি খুশি করতে পারে তারা বরাদ্দও বেশি পায়। আর তারা কোন অনিয়ম করলেও সেটা তারা আমলে নিতে চায় না। সম্প্রতি এখানে ডিলাররা চালের বদলে সাধারণ মানুষকে আটা কিনতে বাধ্য করছে। আমরা সেটা প্রতিবাদ করছি এমনকি স্থানীয় মেম্বারকে দিয়ে সদর খাদ্য কর্মকর্তাকে ফোন করিয়েছি তবুও তারা কর্ণপাত করেনি। আমি যতটুকু জানি সেখানে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে শায়লা নামের একজন মহিলা কর্মকর্তা। অনেক সিনিয়র কর্মকর্তারাও কোন কিছু বলার থাকলে তাকে বলতে বলে।

ঈদগাঁও গোমাতলী এলাকার নাছির উদ্দিন বলেন কিছু দিন আগে আমি একটি ডিও নিয়ে খাদ্য অফিসে গেলে রীতিমতো যেন খেয়া ঘাটে গিয়ে পড়েছি এরকম অবস্থা। আমরা ২ জন ৪ টনের ডিও নিয়ে গেছি সেখানে প্রথমে একজন পিয়ন আমাদের এক মহিলা কর্মকর্তার কাছে নিয়ে গেল। তিনি আমাদের স্বাক্ষর নেওয়ার পর সরাসরি ৮ শত টাকা দাবি করলো। আমরা হতবাক হয়ে ৫০০ টাকা দিতে চাইলে তিনি আমাদের রীতিমত বকাঝকা শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে ৮০০ টাকা দিলে তিনি স্বাক্ষর করেন। এ সময় তিনি আমাদের বলেন এগুলো অনেক পুরনো রীতি, আপনারা নতুন এসেছেন এ জন্য জানেন না। এ সময় আমরা দলীয় পরিচয় দিলে তিনি বলেন, এখানে এসব কাজে আসে না। পরে বের হওয়া সময় এক পিয়নও আমাদের কাছে টাকার জন্য পিছু নেয় পরে বাধ্য হয়ে তাকেও টাকা দিতে হয়।

তিনি বলেন, আমি বুঝতে পারছি না দুদক বা অন্যান্য দূর্নীতি বিরোর্ধী সংস্থা গুলো কি করে। আমি চিন্তা করছি দরকার হলে আমি নিজে অভিযোগ করবো।

কক্সবাজার পৌরসভার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পান থেকে চুন খসলে সেটা পত্রিকায় শিরোনাম হয় কিন্তু খাদ্য অফিসের যে দীর্ঘ দিনের অনিয়ম সেটা কারো দেখার কেউ নেই। টাকা ছাড়া এক চুল ফাইল নড়ে না সেখানে। প্রতিটি কাজের জন্য নির্ধারিত টাকা দিতে হয়। রীতিমত ক্যাশিয়ার হিসাবে দায়িত্বে থাকেন সদর খাদ্য পরিদর্শক। এবং চেয়ারে বসেই নেয় এসব টাকা।

এ ব্যাপরে সদর খাদ্য পরিদর্শক শায়লা ফেরদৌসের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে বলেন।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি