সোমবার,৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


রাজশাহীর ৬শ বিঘা ফুলকপি ক্ষেতে ফুল নেই


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
১৩.১১.২০১৬

cauliflower20161113135807
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সময় পেরিয়ে গেলেও ফুল আসেনি রাজশাহীর দুর্গাপুরের ৬শ বিঘা ফুলকপি ক্ষেতে। লাভ তো দূরের কথা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় এখানকার শত শত কৃষক। হাইব্রিড জাতের ফুলকপি চাষ করে মাথায় হাত উঠেছে তাদের।

চাষিদের অভিযোগ, তারা মল্লিকা সিড কোম্পানির বীজে ফুলকপি চাষ করেছিলেন। কিন্তু ফুল আসেনি গাছে। এতে পথে বসতে বসেছেন তারা। এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারে না বিজ কোম্পানিটি।

চাষিদের ভাষ্য, গেল বছর এই উপজেলায় ফুলকপির আবাদ কম হয়েছিল। বাড়তি লাভের আশায় এবার ব্যাপক আবাদ করেছেন চাষিরা। বিঘা প্রতি ২০ হাজার টাকায় জমি লিজ নিয়ে নেমেছেন মাঠে। অনেকেই ঋণ নিয়ে শুরু করেন চাষ। আগেভাগেই লাগানো হয়েছিলো চারা। হাইব্রিড জাতের এই ফুলকপির চারা গাছের পাতা বেড়ে উঠেছে বেশ ভালই। কিন্তু ফুল আসেনি কোনো গাছেই ।

কথা ছিল, পঞ্চাশ দিনের মধ্যে এই কপি ঘরে উঠবে। কিন্তু ১০০ দিন পেরিয়ে গেলেও ফুলই আসেনি। লাভ তো দূরের কথা কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের চাষি সানাউল হক বলেন, অন্যের ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিনি এবার হাইব্রিড জাতের ফুলকপি চাষ করেন। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে অন্তত ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু ফুল না আসায় এক টাকাও উঠবে না। পুরো টাকাই জলে। সামনে আলু চাষের সুযোগ আছে। কিন্তু পুঁজি না থাকায় আলু চাষেও নামতে পারছেন না।

শুধু সানাউলই নন এলাকার শত শত চাষির একই দশা। তাদের অভিযোগ, বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকায় ঢাকার সিদ্দিক বাজারের মল্লিকা সিড কোম্পানি বীজ সরবরাহ করে আসছিল। কিন্তু এবার রীতিমতো প্রতারণাই করেছে।

একই এলাকার আরেক চাষি লালচাঁন জানান, তিনি ঋণ করে তিন বিঘায় জমিতে মল্লিকার সিডের ম্যাজিক স্নো নামের ফুলকপির চারা লাগিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো গাছেই ফুল হয়নি।

এদিকে মল্লিকা সিডের ফুলকপির চারা বিক্রি করে কৃষকদের তোপের মুখে পড়েছেন স্থানীয় ডিলার ও নার্সারি মালিকরাও।

স্থানীয় নার্সারির মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি মল্লিকা সিডের ফুলকপি বীজ থেকে চারা উৎপাদন করেন। প্রতি কেজি বীজের দাম পড়েছে ২৬ হাজার টাকা। তার কাছ থেকে চাষিরা বাকিতে চারা নিয়ে ফুলকপি চাষ করেছেন। কিন্তু ফলন না পাওয়ায় টাকা দিচ্ছে না। উল্টো তারা ক্ষতিপূরণ চাচ্ছে।

রাজশাহী নওদাপাড়ার মল্লিকা সিড কোম্পানির বীজ ডিলার শহীদুল ইসলাম বলেন, তারাও এমন অভিযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই। তার দাবি, বীজের ভাল মন্দ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। শুধু বিক্রি করা তার কাজ।

এ বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কেজেএম আব্দুুল আউয়াল বলেন, উন্নতমানের বীজ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ব্যবসা করার কথা কোম্পানিগুলোর। কিন্তু কৃষকদের সরলতার সুযোগে প্রতারণা করেছে মল্লিকা সিড। ফুলকপি খুবই স্পর্শকাতর ফসল। রোদের সঙ্গে খুবই সম্পর্কযুক্ত। হয়তো তারা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কৃষকদের কাছে বিক্রি বা বাজারজাত করেছে। কৃষকদের এই ক্ষতির দায় মল্লিকা সিড কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

তবে ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে মল্লিকা মল্লিকা সিড কোম্পানির সহকারী ব্যবস্থাপক উজ্জ্বল কুমার মাঠ পরিদর্শন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি