বৃহস্পতিবার,২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


২০২১ সালে বস্ত্রশিল্প থেকে আয় হবে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
২৬.০৩.২০১৭

পূর্বাশা ডেস্ক:

বস্ত্র শিল্পের বিকাশ ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্পকে প্রতিযোগিতা মূল অবস্থানে নেয়ার লক্ষ্যে ‘বস্ত্র আইন-২০১৭ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করেছে সরকার। এতে এ শিল্পের নয় হাজার শিল্প কারখানা এখন থেকে একটি নির্দিষ্ট আইনি কাঠামোর মধ্যে থাকবে। ফলে বস্ত্র শিল্প সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসার পাশাপাশি অর্জন করা সম্ভব হবে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা।

বস্ত্র পরিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, আইনের খসড়া অনুমোদনের ফলে দেশের ১০টি বস্ত্র শিল্প অঞ্চলে গড়ে ওঠা ৯ হাজার বস্ত্র কারখানা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আসছে। এতদিন সরকারি কোনো আইন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ ছাড়াই ৩০ বছর এসব বস্ত্র শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। আর আইনি কাঠমোর মাধ্যমে এ শিল্পে সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলে বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

বস্ত্র আইনে বস্ত্র শিল্প বলতে বস্ত্র বা তৈরি পোশাক, বস্ত্র খাতের মূলধনি যন্ত্রপাতি, অ্যালাইড টেক্সটাইল ও প্যাকেজিং উপাদান উৎপাদন, বস্ত্রপণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, প্যাকেজিং, গুদামজাত, আমদানি ও রফতানি, বিক্রয় ও বাজারজাত, বায়িং হাউজসহ সব কার্যক্রমকে বোঝানো হয়েছে। এছাড়া এ-সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনাকারী সব প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকেও এর আওতাভুক্ত উল্লেখ করা হয়েছে। বস্ত্র কারখানা মোট ৭টি সংগঠনের সদস্য। সংগঠনগুলো হচ্ছেবিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ, বিটিটিএলএমইএ, বিএলএমইএ, বিজিএপিএমইএ ও বিএসটিএমপিআইএ। বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা রয়েছে ৪ হাজার ৬৭০টি। বিকেএমইএর সদস্য কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৫০০, বিটিএমএর ১ হাজার ৪৩০, বিটিটিএলএমইএর ৮২, বিএলএমইএর ৫৭, বিজিএপিএমইএর ৮৫৩ এবং বিএসটিএমপিআইএর ৪৪৮।

বস্ত্র পরিদপ্তরের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইসমাইল আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, বর্তমান সরকার কারখানা মালিকদের ক্ষতি করে কোনো আইন করবে না। আমরা বর্তমানে যেসব কাজ করছি তা আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই আইনটির ফলে কারখানা মালিকদের কোনো ঝামেলা হবে না। কারখানা মালিকরা পুরো সেবাই অনলাইনে পাবেন।

তিনি বলেন, ২০২১ সালে ৫০ বিলিয়ন অর্জন করতে হলে বস্ত্র আইনটি লাগবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনিটরিং করবেন। পোশাকখাতকে নতুন নতুন মার্কেট তৈরির সহায়তা করবে।যেসব ব্যবসায়ীবস্ত্র বেশি এক্সপোর্ট করবেন তাদের জন্য পুরষ্কারের ব্যবস্থা রয়েছে। এমনকি আগামীতে জাতীয় বস্ত্র দিবসও পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

মোহাম্মদ ইসমাইল আরও বলেন, একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে বস্ত্র শিল্পকে আনা হলেও উদ্দেশ্য থাকবে এ শিল্পের আরো বিকাশ ঘটানো। বেসরকারি খাত নিজ থেকেই বর্তমান পর্যায়ে বিকশিত হয়েছে। এখন এ বিকাশ আরো সুষম ও সুষ্ঠুভাবে যেন হয়, সে বিষয়ে ভূমিকা পালন করবে পোশাক কর্তৃপক্ষ। ঠিক নিয়ন্ত্রণ বা নজরদারি দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা কাজ করতে চাই না।

অনুমোদিত আইন অনুযায়ী, পোশাক কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন ব্যতীত বস্ত্র শিল্প-কারখানা পরিচালনা করা যাবে না। মিথ্যা তথ্য প্রদান বা প্রতারণার মাধ্যমে নিবন্ধন গ্রহণ করলে তা বাতিল হবে। এছাড়া শর্ত লঙ্ঘন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিলম্ব ফি ব্যতীত নিবন্ধন না করলে এবং কোম্পানি-সংস্থা-অংশীদার কারবার বা আইনগত সত্তার ক্ষেত্রে অবসায়ন হলেও নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল হবে। নিবন্ধন বাতিল বা স্থগিতের কারণে কোনো লোকসান বা ক্ষতির জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠান কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবে না।

বস্ত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা হবে পোষক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। পরিদর্শনের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বস্ত্র শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী কারখানা পরিদর্শন করবেন। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে হবে শিল্প মালিক কর্তৃপক্ষকে। সহযোগিতা না করলে তা হবে অপরাধ। পরিদর্শনে পোশাক কর্তৃপক্ষ সুতা ও বস্ত্রের মজুদ কার্যক্রম, বাজারজাত এবং মূল্য স্থিতিকরণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং প্রয়োজন মনে করলে নির্দেশনা জারি করবে। পরিদর্শনের জন্য পোশাক কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলগত সক্ষমতা অর্জনে প্রয়োজনীয়কার্যক্রমও গ্রহণ করবে সরকার।

অনুমোদিত আইনের বিষয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নতুন কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শিল্পকে সহযোগিতা করা হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোনো ধরনের হয়রানি আমরা চাই না। এমনিতেই আমাদের অনেক কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হয়। পোশাক খাত একটি মূল্যায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় নতুন কোনো বিড়ম্বনা আমরা চাই না।

উল্লেখ্য, বস্ত্র কারখানা আছে এমন ১০ জেলার মধ্যে রয়েছে  ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, পাবনা, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কারখানা আছে এমন জোনগুলো হলো— ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম। নরসিংদীসহ মোট পাঁচটি জোনে দেশের বস্ত্র কারখানার ৯৭ শতাংশ অবস্থিত।

পূর্বাশানিউজ/২৬-মার্চ,২০১৭/ফারজানা



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি