প্রচ্ছদ 
বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে ভারতের ৪৯টি গণমাধ্যম: রিউমর স্ক্যানার
৫ আগস্টে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর থেকে বাংলাদেশ–ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির নাগরিকদের কিছু অংশ এবং রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ইস্যুতে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
এমন পরিস্থিতির পেছনে ভারতের শীর্ষস্থানীয় বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের ভূমিকা রয়েছে। এসব গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর ও ভুয়া খবর প্রচারিত হচ্ছে, যা ভারতের নাগরিকরা বিশ্বাস করছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ সংক্রান্ত একাধিক গুজব ছড়ানো হচ্ছে। রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে এর সত্যতা নিশ্চিত করা গেছে।
তথ্য যাচাইকরণ সংস্থা জানায়, রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তনের পর ১২ আগস্ট থেকে ০৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর শনাক্ত করা হয়েছে। এসব ভুয়া খবর প্রচারিত ৪৯টি গণমাধ্যমের মধ্যে রিপাবলিক বাংলা সর্বাধিক ৫টি গুজব প্রচার করেছে। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ এবং লাইভ মিন্ট, যারা প্রত্যেকে অন্তত ৩টি করে গুজব প্রচার করেছে। এছাড়া, রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ এবং আজতক অন্তত ২টি করে গুজব প্রচার করেছে। বাকি ৪১টি গণমাধ্যম অন্তত একটি করে গুজব প্রচার করেছে।
এছাড়া, এসব গুজবের মধ্যে ছিল:
১) শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে ভুয়া খোলা চিঠি।
২) মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার।
৩) ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ভুয়া খবর।
৪) বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি।
৫) ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি।
৬) পাকিস্তানি জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি।
৭) নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার।
৮) বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়ার গুজব।
৯) বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার।
১০) শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি।
১১) বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবর।
৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে জনগণের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দেন, যেখানে তিনি তার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে একটি তথ্য ছড়িয়েছিল। কিন্তু জানা গেছে, শেখ হাসিনা এমন কোনো চিঠি দেননি। রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চিঠিটি প্রথমে ফেসবুকে ছড়ায় এবং পরবর্তীতে ভারতের আগরতলাভিত্তিক দৈনিক ‘ত্রিপুরা ভবিষ্যত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর ওই পত্রিকার স্ক্রিনশটটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে শেয়ার হতে থাকে এবং পরবর্তীতে ভারতের ও বাংলাদেশের কয়েকটি গণমাধ্যমেও এটি প্রচারিত হয়।
৫ আগস্টের পর ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, একজন হিন্দু ব্যক্তি তার নিখোঁজ ছেলের সন্ধানে মানববন্ধন করছেন। তবে রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই ব্যক্তি মুসলিম এবং তার নাম বাবুল হাওলাদার। ২০১৩ সালে নিখোঁজ হওয়া তার ছেলের সন্ধানে তিনি মানববন্ধন করেছিলেন।
