প্রচ্ছদ 
আজ থেকে ‘জয় বাংলা’ আর জাতীয় স্লোগান নয়: আপিল বিভাগ
আজ থেকে ‘জয় বাংলা’ আর জাতীয় স্লোগান নয়। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে এই আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের আপিল বিভাগ।
এর আগে সোমবার জাতীয় স্লোগান হিসেবে “জয় বাংলা” স্থগিত চেয়ে করা আবেদনটির শুনানি হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন সকালে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনিক আর হক দাঁড়ালে আপিল বিভাগ বলেন, এটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হওয়ার প্রয়োজন। তাই ফুল কোর্ট বসলে তবেই শুনানি হবে।
‘জয় বাংলা’কে জাতীয় স্লোগান ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২ ডিসেম্বর এ তথ্য জানান অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক।
২০২০ সালের ১০ মার্চ জয় বাংলা জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ের দিন আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী ড. বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদালত বাংলায় রায় ঘোষণা করেন এবং পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘জয় বাংলা জাতীয় ঐক্যের স্লোগান। জয় বাংলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রিয় স্লোগান এবং জয় বাংলা ৭ মার্চের ভাষণের সাথে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’
আদালত আরও বলেন, ‘আবেদনকারী সংবিধানের ৩ ও ৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ধারাবাহিকতায় জাতীয় স্লোগান হিসেবে জয় বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন, কিন্তু এটি এই আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত। কারণ আইন প্রণয়ন ও সংবিধান সংশোধনের একমাত্র অধিকার জাতীয় সংসদের।’
তবে রাষ্ট্রপক্ষ এ রুলের সমর্থনে হলফনামা দিয়েছেন উল্লেখ করে আদালত রায়ে বলেন, আইন সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে গ্রহণে একমত পোষণ করেছেন। এরপর আদালত রায়ের আদেশ অংশ ঘোষণা করেন।
আদেশে আদালত বলেন: ১. আমরা ঘোষণা করছি যে, জয় বাংলা বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান হবে। ২. সকল জাতীয় দিবসগুলোতে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদাধিকারীগণ ও রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকর্তা সরকারি অনুষ্ঠানের বক্তব্য শেষে জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করবেন, এর জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ৩. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অ্যাসেম্বলি সমাপ্তির পর ছাত্র-শিক্ষকগণ যেন জয় বাংলা স্লোগান উচ্চারণ করেন, তার জন্য বিবাদীরা যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
আদালতের এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন ৩ মাসের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
সম্প্রতি এই রায়ের বিরুদ্ধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আপিল বিভাগে আবেদন করেছে।
২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। রুলে ‘জয় বাংলা’কে কেন জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট।
২০১৭ সালের ৪ ডিসেম্বর আদেশের পর বশির আহমেদ বলেছিলেন, জয় বাংলা আমাদের জাতীয় প্রেরণার প্রতীক। পৃথিবীর ৬০টি দেশে জাতীয় স্লোগান আছে, কিন্তু বাংলাদেশে স্বাধীনতার এতদিন পরেও জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগান হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি।
তিনি বলেন, জয় বাংলা কোনো দলের স্লোগান নয়, কোনো ব্যক্তির স্লোগান নয়, এটি হচ্ছে আমাদের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। এই স্লোগান দিয়ে একদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, এবং বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
