তাবলিগের দ্বন্দ্বের সমাধান সংঘাত নয়, আলোচনার মাধ্যমে চান আজহারী
তাবলিগের দুই পক্ষের চলমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে উভয় পক্ষের নেতাদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে জনপ্রিয় আলেম ও আলোচক মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, দেশের সবচেয়ে বড় দাওয়াতি প্ল্যাটফর্ম তাবলিগ জামাতের এই সংকটে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আপনারা আলোচনায় বসুন, তবে ফলপ্রসূ আলোচনার পূর্বশর্ত হলো দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে চিন্তা করা এবং একে অপরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা। মনে রাখবেন, এটি শুধু দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, দেশের মুসলমানদের ভাবমূর্তি জড়িত।”
মিজানুর রহমান আজহারী আরও বলেন, “সাত সকালে ঘুম ভাঙতেই এমন একটি খবর শুনে আমি রীতিমতো আঁতকে উঠেছি। অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আহারে, আমার দেশে এক মুসলিম ভাইয়ের হাতে আরেক মুসলিম ভাই রক্তাক্ত হয়েছে! এই দৃশ্য কিভাবে সহ্য করি?”
ইসলামপূর্ব যুগে মদিনার আওস ও খাযরাজ গোত্রের শত্রুতার ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আওস ও খাযরাজ গোত্রের মধ্যে শত বছরের শত্রুতা ছিল। সেই শত্রুতা ঘোচাতে নবী (সা.) এক ঘণ্টাও সময় নেননি। কারণ তিনি সমস্যার গোড়ায় হাত দিয়েছিলেন। নবী (সা.) দেখেছিলেন, দুই গোত্রের মাঝেই ইগো-প্রবলেম ছিল, যার কারণে শত্রুতা চলছিল। তিনি তখন তাওহিদের গুরুত্ব বোঝান। নবী (সা.) বলেছিলেন, ‘শোনো, তোমরা কেউই বড় নও। বড়ত্ব একমাত্র আল্লাহর।’ এই আপ্তবাক্য সেদিন শত্রুতা দূর করে আওস এবং খাযরাজকে একে অপরের ভাই বানিয়ে ফেলেছিল।”
আজহারী আরও বলেন, “এ ঘটনা তাবলিগের দায়িত্বশীলদের সামনে আত্মসমালোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। বছরের পর বছর ধরে আপনারা কোন শিক্ষাটি সাথীদের দিলেন? আপনারা কি তাদেরকে ‘এক উম্মাহ’ কনসেপ্ট শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন? আপনারা যদি যথাযথ তরবিয়ত দিতে পারতেন, তবে আজ সাথীরা নিজেদের মধ্যে শত্রুতা করতে পারত না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তাবলিগের দুই পক্ষ নিজেদের মত কাজ করছে, তবে সেখানে মারামারি ঘটছে না কারণ তাদের মধ্যে উম্মাহ স্পিরিট রয়েছে। এই স্পিরিট যত বাড়বে, দলীয় স্বার্থ তত নগণ্য হয়ে উঠবে।”
তাবলিগের সাথীদের সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আজহারী বলেন, “আল্লাহকে ভয় করুন। মুসলমান ভাইয়ের রক্ত ঝরানো নবিজির উম্মতের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এটি কেবল আসাবিয়্যাত (দলবাজি)। আর আসাবিয়্যাতের পরিণতি কত ভয়াবহ, তা নবী (সা.)-এর হাদিসেই রয়েছে: ‘যে আসাবিয়্যাতের দিকে ডাকে, সে আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। যে আসাবিয়্যাতের জন্য লড়াই করে, সে আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়। এবং যে আসাবিয়্যাতের ওপর মৃত্যুবরণ করে, সে আমার দলের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৫১২১)”
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) ভোরে গাজীপুরের টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে তাবলিগ জামাতের জুবায়ের ও সাদপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের দুই মুসল্লি নিহত ও বেশ কয়েকজন মুসল্লি আহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জুবায়েরপন্থি সাথি মো. আমিনুল ইসলাম বাচ্চু এবং বগুড়া জেলার সাদপন্থি সাথি তাইজুল ইসলাম।