হাসিনা শিশুদের গোপন কারাগারে আটকে রেখে মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত করতেন
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের চাপে পড়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে তার ও তার পরিবারের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড একের পর এক প্রকাশ্যে আসছে। সম্প্রতি তুরস্কের সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড শেখ হাসিনার আমলে সংঘটিত ভয়াবহ অপরাধের তথ্য প্রকাশ করেছে।
টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শাসনামলে শিশুদের পর্যন্ত গোপন কারাগারে বন্দী রাখতেন। এই শিশুদের মায়ের দুধ পান করতে দেওয়া হতো না। জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশুদের ব্যবহার করা হতো মা-বাবার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করার হাতিয়ার হিসেবে।
গুমের তদন্তকারী একটি কমিশনের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত ছয়জন শিশু তাদের মায়েদের সঙ্গে মাসের পর মাস কারাগারে আটক ছিল। তাদের আটক রেখে ভয়ংকর মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। শিশুদের মায়ের দুধ পান করতে না দেওয়ার মতো অমানবিক ঘটনাও এর অন্তর্ভুক্ত।
কমিশন আরও জানিয়েছে, তারা এমন বেশ কিছু ঘটনার বিশদ বিবরণ পেয়েছে, যেখানে নারীদের তাদের সন্তানসহ গুম করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনায় এক গর্ভবতী নারীকে তার দুই শিশুসন্তানসহ আটক রাখা হয় এবং সেই বন্দিশালায় তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, তাকে তার মায়ের সঙ্গে শিশুকালে একটি গোপন কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছিল। এ কারাগারটি পরিচালনা করত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সেই প্রত্যক্ষদর্শীর মা আর কখনো ফিরে আসেননি।
আরেকটি ঘটনায়, এক দম্পতি ও তাদের শিশুকে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবার ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টির জন্য শিশুটিকে মায়ের দুধ থেকে দূরে রাখা হয়।
শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন এসব গুম ও নির্যাতনের ঘটনা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। তারা দাবি করত, নিখোঁজদের অনেকেই ইউরোপে যাওয়ার পথে সাগরে ডুবে মারা গেছেন।
তদন্ত কমিশনের তথ্যমতে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অপহৃত প্রায় ২০০ বাংলাদেশি এখনো নিখোঁজ।
কমিটির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, “ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য ব্যবহার করে জড়িত বাহিনীকে শনাক্ত করা হবে। এ ক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট কমান্ডারদের জবাবদিহির আওতায় আনার সুপারিশ করব।”
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যেই তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধীদের বিচারবহির্ভূত হত্যা, অপহরণ, গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে।