রবিবার,১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


হালদাকে বাঁচাইতে হইবে


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
২২.০৩.২০১৭

পূর্বাশা ডেস্ক:
মানুষসৃষ্ট নানা প্রকার দূষণ ও প্রতিবন্ধকতায় বিপন্ন হইবার দ্বারপ্রান্তে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। নদীর স্বাভাবিক গতিপথ রোধ করিয়া রাবার ড্যাম ও স্লুইস গেইট নির্মাণ, শিল্প ও আবাসিক বর্জ্যজনিত দূষণ, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট নদীর বাঁকসমূহ কর্তন, যথেচ্ছ বালি উত্তোলন, নদীর পাড় ঘেঁষিয়া অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটার বিরূপ প্রভাব এবং মা মাছ নিধনজনিত কারণে ক্রমেই মত্স্য প্রজননের অনুপযোগী হইয়া পড়িতেছে নদীটি। ফলে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পাইয়াছে রেণু পোনা উত্পাদন। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন হইতে জানা যায়, ৫০ বত্সর পূর্বে এই হালদা নদী হইতে বত্সরে প্রায় চার হাজার কেজি রেণু পোনা উত্পাদিত হইত, কিন্তু ২০১৬ সালে উত্পাদিত রেণু পোনার পরিমাণ মাত্র ১২ কেজি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবনের জন্য কেবল এই তথ্যটিই যথেষ্ট বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে।

এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মত্স্য প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত এই নদীটির রহিয়াছে নানাবিধ উপযোগিতা। প্রাকৃতিকভাবে দেশের মিঠা পানির মত্স্য উত্পাদনে ব্যাপক অবদানের পাশাপাশি চট্টগ্রামবাসীর প্রাত্যহিক জীবনেও আছে নদীটির বিশেষ প্রভাব। নদী পাড়ের মানুষের কৃষি ও ষাট লক্ষাধিক স্থানীয় অধিবাসীর ব্যবহূত পানির জোগান আর সংগৃহীত মাছের ডিম বাবদ প্রতি বত্সর কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের জোগান দেয় এই নদী। তাহা ছাড়া এই নদীতে কর্ণফুলী, সাংগু, শিকলবাহা ও চাঁদখালি নদীর মাছও ডিম দেয়। কিন্তু নদীটিতে উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে এই বত্সর মা মাছ নমুনা ডিম ছাড়িলেও মূল ডিম ছাড়ে নাই। ইহার প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ করিয়া সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলিয়াছেন, নদীর বাঁকগুলি কাটিয়া দিবার ফলে নদীর তলদেশে পানির ঘূর্ণনজনিত গর্ত (মাছের প্রজননকালীন আশ্রয়স্থল) সৃষ্টি না হওয়াই মূলত প্রধান সমস্যা। পাশাপাশি নদীর উজানে নির্মিত রাবার ড্যাম ও অকার্যকর হইয়া পড়িয়া থাকা স্লুইস গেটগুলিও পানির প্রবাহ সচল রাখার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করিতেছে। ফলে কমিয়া যাইতেছে নদীর গভীরতা, জাগিয়া উঠিতেছে চর। সর্বোপরি বর্জ্য নিক্ষেপজনিত দূষণ এবং নির্বিচারে মা মাছ নিধনের মারাত্মক সমস্যা তো আছেই।

সার্বিক বিবেচনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসাবে হালদাকে বাঁচানো জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। আমরা জানি, ইতোপূর্বে নদীটিকে বাঁচাইবার লক্ষ্যে গৃহীত হইয়াছিল নানামুখী সরকারি-বেসরকারি পদক্ষেপ। সরকারের ঊর্ধ্বতন পর্যায় হইতে প্রদত্ত হইয়াছিল সর্বাত্মক সহায়তার প্রতিশ্রুতি। এতদসত্ত্বেও কেন হালদা দিন দিন মত্স্য প্রজননের অনুপযোগী হইয়া পড়িতেছে তাহার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করি, হালদার বর্তমান বিপন্ন দশার জন্য যে বা যাহারা দায়ী তাহাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হইবে। সর্বোপরি, হালদাকে বাঁচাইবার লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হইবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে।


এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি