শুক্রবার,৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ


আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্ভব গণহত্যা দিবস হিসেবে


পূর্বাশা বিডি ২৪.কম :
২৫.০৩.২০১৭

পূর্বাশা ডেস্ক:

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবহিনী ঢাকায় বাঙ্গালীদের ওপর বর্বর হত্যাকা- চালায়। অপারেশন সার্চ লাইট নামে সেই অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার বাঙ্গালী প্রাণ হারায়। গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশে এই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবস পালন করা হচ্ছে। এর আগে জাতীয় সংসদে ও মন্ত্রিসভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও পাশ হয়েছে। কিন্তু গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি কতটা সম্ভব? যদিও অনেকেই বলছেন, ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া না দেয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিও রয়েছে।

জাতিসংঘের জেনোসাইড বা গণহত্যা সংজ্ঞায় বলা আছে, পরিকল্পিতভাবে একটি জাতি, নৃগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার প্রয়াসে হত্যা, নির্যাতন এবং জন্ম প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হলে সেটি গণহত্যা বা জোনোসাইড হিসেবে গণ্য হবে।

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে হত্যা ও নির্যাতন নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে গবেষণা করেছেন ডা. এম এ হাসান গণহত্যার আন্তর্জাতিক সংজ্ঞার আলোকে বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যে হত্যা, নির্যাতন হয়েছে সেটি নিশ্চিতভাবেই জেনোসাইড বা গণহত্যা।

তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ২০০৪ সালে ইউনেস্কোর কাছে ২৫শে মার্চকে গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। চিঠির জবাবে বলা হয়েছিল, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র আবেদন করলে সেটি বিবেচনা করা যায়।

তিনি জানান, পরবর্তীকালে তৎকালীন সরকারও বিষয়টি নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অন্যদিকে একই ধরনের একটি দিবস থাকায় ২৫শে মার্চের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে একটি বিশেষজ্ঞ সেল গঠন করে কাজ করা প্রয়োজন বলে মি. হাসান মনে করেন।

এম এ হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের আত্মপরিচয়ের সন্ধান দেবার জন্য এ দিনটিকে একটি ভিন্ন নামে হলেও আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন এবং সেটা সম্ভব। যাতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একাত্তরের গণহত্যা সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ ও স্পষ্ট ধারনা থাকে। যেটা কোনো রেকর্ডে স্বীকৃত নয়, ইম্পেরিয়াল ওয়্যার মিউজিয়ামসহ পৃথিবীর বিভিন্ন আর্কাইভে নানা কারণে উপেক্ষিত। সে বৃত্ত থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারি।’

২৫শে মার্চ আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চেষ্টা করেও সরকারি উদ্যোগ না থাকায় সেটি সম্ভব হয়নি। দেরিতে হলেও সরকারের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির প্রধান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘২০০৫ সাল থেকে নির্মূল কমিটি এ দিবসটা পালন করে আসছে। দীর্ঘকাল আমাদের দাবির প্রতি কোনো সরকারই কর্ণপাত করেননি। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, ইউনেস্কোকেও চিঠি দিয়েছিলাম। জবাব হিসেবে আর্মেনিয়া থেকে আমাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বাংলাদেশে কি ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়? আমরা জানিয়েছিলাম, হয় না। ফলে তারা বলেছিলো যেটা বাংলাদেশ জাতীয়ভাবে পালন করে না সেটা আন্তর্জাতিকভাবে কেন জাতিসংঘকে পালন করতে হবে? সে কারণে আর্মেনিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী ৯ই ডিসেম্বরে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত হয় জাতিসংঘে।’

২৫শে মার্চ দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বাংলাদেশ সরকার তৎপরতা শুরু করছে। যদিও দেখা যাচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইহুদি হত্যা, রোয়ান্ডা ও ক্যাম্বোডিয়ার মতো হাতেগোনা কয়েকটি ঘটনাকে জাতিসংঘ গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এছাড়া এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক রাজনীতি জড়িত রয়েছে।

এ ব্যাপারে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘পশ্চিম ইউরোপের বহু দেশ প্রত্যক্ষভাবে না হলেও পরোক্ষভাবে ৭১-এ গণহত্যাকারীদের সমর্থন দিয়েছে। আমেরিকা, চীন, তথাকথিত ইসলামি উম্মাহ এরা কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষেই ছিল। তারা গণহত্যার ব্যাপারে সরকারিভাবে প্রতিবাদ করেনি যদিও সেসব দেশের গণমাধ্যম এবং জনগণ এর নিন্দা করেছে।’

এখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে বন্ধু দেশগুলোর সংসদে এ দিবসের স্বীকৃতিতে প্রস্তাব পাশ করার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন শাহরিয়ার কবির।

তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ ৭১’এ পাকিস্তানের পক্ষে তাদের কাছে পরে যাওয়া যাবে। প্রথমে বেশিরভাগ দেশের কাছ থেকে আমরা স্বীকৃতিটা নিয়ে নিই। এরপর আমাদের বন্ধুদেরকে নিয়েই আমরা জাতিসংঘে যাব। তখন আমরা আশা করতে পারি যে অদূর ভবিষ্যতে জাতিসংঘেরও স্বীকৃতি পাওয়া যাবে। কারণ আন্তত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন দলিলপত্রেও বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে স্মরণকালের ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যার একটি বাংলাদেশে ঘটেছিল।’

বাংলাদেশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য প্রচেষ্টা চালালেও সব সরকারই এ ব্যাপারে উদাসীনতা দেখিয়েছে।

এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একসাথে তো সব কাজ করা যায় না। যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার। আগে তো একটা জিনিস করার মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে হয়, জনমত সৃষ্টি করতে হয়, পরে সিদ্ধান্ত নিলে সিদ্ধান্তটা বেশি কার্যকর হয়। তাই আমরা মনে করেছি আগে একটা জনমত সৃষ্টি হোক, জনসাধারণ উপলব্ধি করুক যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি তৎপর হওয়ায় এ কাজটা আমাদের করা দরকার।



এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা বা ছবি অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি