নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজন সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
বায়ুদূষণ কমানো ও কৃষিজমি সংরক্ষণের লক্ষ্যে সরকারি নির্মাণকাজে ব্লকের ব্যবহার বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, এটি টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এ লক্ষ্য অর্জনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বায়ুদূষণ কমানো ও কৃষিজমি সংরক্ষণে ব্লকের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় ব্লকের ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষা ও কৃষিজমি রক্ষার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “ব্লকের ব্যবহার শুধু পরিবেশবান্ধবই নয়, এটি নির্মাণ খাতের দক্ষতা ও স্থায়িত্বও বাড়ায়। আমরা সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও অংশীজনদের সঙ্গে সমন্বয় করে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করব।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই উদ্যোগ পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আমরা সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
সভায় ব্লক উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন নীতি সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়। ব্লককে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা, কাস্টমস ও ট্যাক্স সহনীয় পর্যায়ে আনা এবং ব্লক উৎপাদনের যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক কমানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়া, উন্নয়ন প্রকল্পে ব্লকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে এলজিইডি, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার রেট সিডিউল হালনাগাদ করার বিষয়েও মতামত উঠে আসে।
সভায় ব্লকের গুণগত মান বজায় রাখতে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) এবং বিএসটিআই-এর সহযোগিতায় জাতীয় মানমাত্রা নির্ধারণের ওপরও জোর দেওয়া হয়। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামানসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ম্যাক্সক্রিট লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় এএসি ব্লক একটি কার্যকর সমাধান। একটি এএসি ব্লক ১৫ থেকে ২০টি হোলো ব্লকের সমান উৎপাদনশীলতা প্রদান করে।” তিনি আরও বলেন, “কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য সরকার যদি যথাযথ উদ্যোগ না নেয়, তাহলে এএসি ব্লক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।”
ইকো-ফ্রেন্ডলি গ্রিন ব্রিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, “এটি একটি বড় উদ্যোগ, তাই রাতারাতি এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ধাপে ধাপে এএসি ব্লক ও অন্যান্য ব্লকের ব্যবহার বাড়ানোর প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া উচিত।”
বিনিয়োগকারীরা জানান, বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তরে এএসি ব্লকের যে রেট নির্ধারণ করা হয়েছে, তা উৎপাদন খরচের চেয়েও অনেক কম। তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে রেট শিডিউল সংশোধন এবং ব্লক শিল্পের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা, পৃষ্ঠপোষকতা ও ঋণ সুবিধার দাবি জানান। তারা আশা প্রকাশ করেন যে, সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে আগামী দুই বছরে দেশে আরও ১০-২০টি ব্লক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।